দক্ষিন দিনাজপুরঃ বাজারে বাহারী ফলের সমাহারে রাজত্ব করছে কাঁচা তাল বা তালের শাঁস। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, আনারসসহ রকমারি ফলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজারে উঠেছে তাল-শাঁস। অন্যান্য ফলের চেয়ে তাল-শাঁসের বৈশিষ্ট্য একটু অন্যতম। এই গরমে হরেক রকম মৌসুমী ফলের সঙ্গে ফলপিপাসু মানুষের কাছে দিন দিন তাল-শাঁসের কদর বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। কদর বৃদ্ধির একটা অন্যতম কারণ হলো এটিতে কোনো কীটনাশক বা ফরমালিন অথবা কার্বাইড মেশানোর প্রয়োজন পড়ে না। একমাত্র নির্ভেজাল ফল হিসেবে তাল শ্বাসের গুরুত্ব অনেকটাই। অনেকেই রাস্তার পাশে বসে ও দাঁড়িয়ে এ ফল খাচ্ছেন। কেউ কাঁদি ধরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে। তীব্র গরমে তাল শাঁস মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী। তাই তীব্র গরমে একটু স্বস্তি পেতে দক্ষিন দিনাজপুর জেলা জুড়ে বেড়ে চলেছে তাল শাঁসের কদর। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে জমজমাট ভাবে চলছে তাল শ্বাসের বিক্রয়। এর মাধ্যমে অধিক স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন বিক্রেতারাও।অনেক তাল-শাঁস বিক্রেতাদের দেখা যাচ্ছে স্কুল, কলেজ গেটে। তাল-শাঁস বিক্রেতাদের মূল টার্গেট অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে এই ফল বিক্রয় করা। তৃষ্ণা মেটানোর জন্যও তাল-শাঁস খাওয়া হয়ে থাকে। কাঁচা তাল শাঁসে যথেষ্ট পরিমান খনিজ পদার্থ রয়েছে যা মানব দেহের জন্য বিশেষ ভাবে উপকারী। তাল শ্বাস খাওয়া থেকে পিছিয়ে নেই বড়োরাও। গরমে একটু স্বস্তি পেতে তালের শাঁস খাচ্ছেন ৮ থেকে ৮০ ছেলে-বুড়ো সকলেই। রিকশা চালক থেকে শুরু করে সকল শ্রেণী এবং পেশার লোকজনই মৌসুমী ফল তাল শাঁস ক্রয় করতে ভীড় করছেন বিক্রেতাদের দরবারে।
একটি তাল-শাঁস বর্তমান বাজার দর সাত থেকে দশ টাকা। এক একটি তালের ভেতরে তিন-চারটি আঁটি বা শাঁস থাকে। একটি গাছে তিন থেকে পাঁচশ তাল ধরে। প্রতিটি কচি তালের পাইকারি দাম তিন থেকে চার টাকা।
তাল-শাঁস বিক্রেতারা গ্রামে গ্রামে ঘুরে গাছের মালিকদের কাছ থেকে পাইকারিভাবে কচি তাল কিনছে। তাল বিক্রি করে জেলার অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাদের মধ্যে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বুনিয়াদপুর শেরপুর পৌর এলাকার অন্তর্গত ২নং ওয়ার্ড ভুক্ত সুকুমার সরকার জেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে গাছ মালিকদের কাছ থেকে তাল-শাঁস ক্রয় করেন। এরপর বিভিন্ন বাজারে সেগুলো পাইকারী অথবা সুযোগ বুঝে খুচরো টাকায় বিক্রি করে থাকেন সুকুমার সরকার। সুকুমার সরকার জানান, আগে দিনমজুরের কাজ করতেন। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো তাকে। তখন তিন বেলা দুই মুঠো ভাত ছাড়া অন্য কোন কিছুর আশা করতেন না তিনি। এখন তিনি প্রতিটি তাল শাঁস ৭ টাকা থেকে ১০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এতে তার প্রতিদিনের আয় দাঁড়িয়েছে তিন থেকে চার’শ টাকা। তবে তাল গাছ কেঁটে ফেলার কারণে দিনদিন হ্রাস পেয়েছে তালের ফলোন। এর ফলে দেখা দিচ্ছে তাল শাঁসের সংকট । ফলে চড়া দামে বিক্রি করতে হচ্ছে মৌসুমী ফল। এছাড়াও তিনি জানান এমন চলতে থাকলে ভবিষ্যতে তাল শাঁসের মতো সুস্বাদু ফলের অভাব দেখা দিতে পারে বলে তার আশংকা।